Ticker

7/recent/ticker-posts

DNA Fingerprint | ডিএনএ ফিঙ্গারপ্রিন্ট কী? - একটি পর্যালোচনা

আজকের আর্টিকেলে আমরা ডিএনএ ফিঙ্গারপ্রিন্ট কী? কীভাবে কাজ করে?  ডিএনএ ফিঙ্গারপ্রিন্টের ব্যবহার এবং এর সুবিধা অসুবিধা সম্পর্কে জানবো।

DNA Fingerprint
চিত্র : ডিএনএ ফিঙ্গারপ্রিন্ট 

ডিএনএ হলো জীবদেহের নীলনকশা (ব্লুপ্রিন্ট)। প্রতিটি ব্যক্তির আঙ্গুলের ছাপের ন্যায় তার কোষস্থ ডিএনএ এর গঠনও একক ও অদ্বিতীয়। ডিএনএ এর পার্থক্যের ভিত্তিতে ব্যক্তিকে অদ্বিতীয়ভাবে শনাক্ত করে। ডিএনএ প্রোফাইলিং (DNA Profiling) বা ডিএনএ ফিঙ্গারপ্রিন্ট (DNA Fingerprint) হলো একটি অত্যাধুনিক পদ্ধতি যার মাধ্যমে কোষের মধ্যে অবস্থিত ডিএনএ বিশ্লেষণ করে কোনো মানুষের একই প্রোফাইল বা প্রতিকৃতি তৈরি করা যেটি উক্ত ব্যক্তিকে শনাক্ত করতে ব্যবহৃত হতে পারে। বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করে জেনেছেন যে মানুষের ডিএনএ এর মধ্যে এমন কিছু নিউক্লিওটাইডের পুনরাবৃত্তি থাকে, যা নির্দিষ্ট মাতা ও পিতার সঙ্গে কেবল তাদের সন্তানেরাই ভাগ করে নেয়। রক্তের শ্বেত কনিকাতে বা শুক্ররসে, চুলের গোড়ায় অথবা অস্থিতে অবস্থিত কোষ থেকে ডিএনএ সংগ্রহ করে এই ডিএনএ প্রোফাইল বা ফিঙ্গারপ্রিন্ট প্রস্তুত করা হয়। 

সম্পর্কিত আর্টিকেল : হ্যান্ড জিওমেট্রি কী? 

ডিএনএ ফিঙ্গারপ্রিন্ট যেভাবে কাজ করে (How DNA Fingerprint Performs) :

১৯৮৬ সালে ইংল্যান্ডের Leicester বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী অ্যালেক জেফ্রিস (Alec Jeffrezs) ফরেনসিক গবেষনায় এক অভূতপূর্ব পরিবর্তন আনলেন ডিএনএ প্রোফাইলিং আবিষ্কারের মাধ্যমে। ল্যাবরেটরিতে কাজ করার সময় তিনি একটি পরিবারের বিভিন্ন সদস্যের ডিএনএ এর এক্স-রে ফ্লিমের মধ্যে মিল খুঁজে পান, যা তার ডিএনএ প্রোফাইলিং পদ্ধতি আবিষ্কারের মূল ভিত্তি। বর্তমানে এই পদ্ধতি National DNA database এ ব্যপকভাবে কাজে লাগানো হচ্ছে। ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত National Forensic DNA Profiling Laboratory হলো বাংলাদেশের একমাত্র ডিএনএ টেস্ট করার প্রতিষ্ঠান। 

বিভিন্ন মানুষের ডিএনএ প্রোফাইলে ৯৯.৯৯% মিল থাকলেও এর ০.১% প্রত্যেক মানুষের জন্য ইউনিক। ডিএনএ ফিঙ্গারপ্রিন্ট এর ০.১% স্বতন্ত্ররাই ব্যক্তি শনাক্তকরণে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। 

ডিএনএ প্রোফাইলের মূখ্য উপাদান ডিএনএ প্রধানত কোনো অপরাধের স্থান (যেমন খুনের স্থান, কোনো জায়গায় পড়ে থাকা রক্ত ইত্যাদি), মানবদেহের রক্ত, চুল, শুক্ররস, পরিহিত জামা-কাপড় থেকে সংগ্রহ করা যেতে পারে। মানুষের ক্ষেত্রে শ্বেত কনিকার বা শুক্ররসে, চুলের গোড়ায় অথবা অস্থিতে অবস্থিত কোষ থেকে ডিএনএ সংগ্রহ করে ডিএনএ প্রোফাইল করা হয়। সংগৃহীত ডিএনএ কে প্রধানত টেস্ট টিউবে সংগ্রহ করা হয় এবং একে সংরক্ষিত রাখার জন্য ঠান্ডা বা কম উষ্ণতায় রাখা হয়। 

ডিএনএ ফিঙ্গারপ্রিন্টের সুবিধা :

  • পদ্ধতিগত ত্রুটি না থাকলে শনাক্তকরণে সফলতার পরিমাণ শতভাগ। 
  • মানবদেহে যেকোনো প্রত্যঙ্গ বা জৈবিক উপাদান যা কোষ ধারণ করে সেখান থেকেই ডিএনএ স্যাম্পল সংগ্রহ করা সম্ভব। 

ডিএনএ ফিঙ্গারপ্রিন্টের অসুবিধা :

  • সহোদর জমজদের ক্ষেত্রে ডিএনএ ফিঙ্গারপ্রিন্ট সম্পূর্ণ এক হয়।
  • প্রোফাইলিং করার সময় সংকরায়ন ও প্রোবিং পদ্ধতির ত্রুটি ডিএনএ ফিঙ্গারপ্রিন্টের ত্রুটি সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। 
  • পরীক্ষাগারের কর্মীদের কর্মদক্ষতা ও পারদর্শীতা এবং সতর্কতার অভাব ডিএনএ ফিঙ্গারপ্রিন্টের ফলের উপর প্রভাব পড়ে। 
ডিএনএ ফিঙ্গারপ্রিন্টের ব্যবহার :
  • অপরাধী শনাক্তকরণে ফিঙ্গারপ্রিন্ট ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। 
  • পিতৃত্ব ও মাতৃত্ব নিয়ে বিবাধ দেখা দিলে তা সমাধানে ডিএনএ ফিঙ্গারপ্রিন্ট বিশদভাবে কাজে লাগে। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য যেহেতু সন্তান পিতার অর্ধেক ও মাতার অর্ধেক ডিএনএ লাভ করে সেজন্য সন্তানের ডিএনএ ফিঙ্গারপ্রিন্টের সঙ্গে বাবা বা মায়ের ডিএনএ ফিঙ্গারপ্রিন্টের অর্ধেক মিল পাওয়া যায়। 
  • বিকৃত মানবদেহ শনাক্তকরণে ডিএনএ ফিঙ্গারপ্রিন্ট ব্যবহৃত হয়।
  • মানুষের বিবর্তনের সঠিক রাস্তা খোঁজা বা লুপ্তপ্রায় প্রানীর বংশবৃদ্ধির জন্য জীনগত মিল রয়েছে এমন আত্মীয় খুঁজতে ডিএনএ ফিঙ্গারপ্রিন্ট ব্যবহৃত হয়ে থাকে। 
→একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি থেকে সংগৃহীত।

Post a Comment

0 Comments