জাপানের এক ছোট্ট গ্রামে একটি ছোট্ট ছেলে বাস করতো। ছেলেটার পরিবার ছিলো খুব দরিদ্র। ভাঙ্গা একটা ঘরে তার পরিবারের সবাই কোনোরকমে জীবনযাপন করতো। কম উপার্জনের কারণে ছেলেটার পরিবারে সবসময়ই অভাব লেগে থাকতো। অভাবের কারণে মাত্র নয় বছর বয়সেই সে পরিবারকে সাহায্য করার উদ্দেশ্যে একটি দোকানের কাজে ঢোকে।
অলসতা ছেলেটিকে ছুঁতেই পারতো না। ছেলেটা প্রতিনিয়তই সূর্য উঠার আগে ঘুম থেকে উঠতো। সকালে সবার আগে ঘুম থেকে উঠে দোকানের ভিতরে বাইরে সব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে রাখতো। এতো ছোট্ট বয়সে নিজের কাজ এতো সুন্দর ভাবে করে দেখানোর কারনে দোকানের মালিক তার উপর ভরসা করতো এবং খুব স্নেহ করতেন।
কয়েক বছর পর! সেখানকার এক ইলেকট্রনিক কোম্পানি তে ছেলেটা একটা কাজ পায়। সেই কোম্পানি তে কাজ করতে করতে ইলেকট্রনিক বাল্ব ও সকেট কীভাবে তৈরি করতে হয় সেটা সে শিখে নেয়। অতঃপর সকেট তৈরি করার প্রতি তার উৎসাহ ও আগ্রহ ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। প্রতিদিন কাজের শেষে যে সময় বাঁচতো সেই সময় দিয়ে সে নতুন নতুন সকেট তৈরি করার চেষ্টা করে যেতো।
'নতুন কোনো কিছু তৈরি করবো' এই আত্মবিশ্বাসের সাথে সে সর্বদা প্রচেষ্টা করে যেতো। আর একদিন সে সত্যি সত্যি একধরনের নতুন সকেট তৈরি করে ফেলে। একটা নতুন জিনিস আবিষ্কার করেছে সে- এই ব্যাপার টা ভীষণ খুশির সাথে সে তার কোম্পানির ম্যানেজারকে জানায় এবং দেখায়। কিন্তু ম্যানেজার তার তৈরি জিনিসটা দেখে একটুও অবাক হয়নি। বরং ম্যানেজার তাকে বলতেছে - তোমার এই তৈরি সকেট সঠিক কাজ করবে না, অথবা বাজারে এর কোনো চাহিদা হবে না। এসব বলে ম্যানেজার ছেলেটাকে ফিরিয়ে দেয়।
ম্যানেজার তার এই বিপ্লবের কোনো মুল্য না দিলেও সে তার মনোবল ভাঙেনি। তার বিপ্লব তথা আবিষ্কার অবশ্যই সফল হবে এই বিশ্বাস সে মনের মধ্যে ভীষনভাবে পোষণ করে রাখে। সে নিজেও যদি এমন একটা কোম্পানি খুলে তাহলে কেমন হয়; এরকম উচ্চতর চিন্তাভাবনাও করে সে।
কিন্তু একটি কোম্পানি শুরু করার মতো টাকা ও অভিজ্ঞতা তার কাছে তখন ছিলোনা। আর লেখাপড়াও মাত্র ৯ বছর বয়সে ছেড়ে দেয়ার কারণে শিক্ষাগত যোগ্যতাও তার যথেষ্ট নেই। কিন্তু ছোটবেলা থেকেই বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখা ও অনেক পরিশ্রম করার কারণে ছেলেটার ভিতরে আত্মবিশ্বাসের কোনো কমতি ছিলো না।
যখন ছেলেটা ২২ বছর বয়সে পা দিলো, তখন সে তার জীবনের একটা সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলো। ছেলেটা কোম্পানির চাকরি ছেড়ে দিয়ে একটা ছোট ব্যবসা শুরু করে। ব্যবসার যাত্রাটি বাড়ি থেকেই শুরু করে সে। বাড়ির ছোট্ট একটা যায়গা নির্বাচন করে সেখানে সে তার সেই নতুন ধরনের সকেট তৈরির কাজ শুরু করে দেয়। আস্তে আস্তে সকেট তৈরি হয়ে যাবার পর দোকানে দোকানে গিয়ে সেগুলোকে বিক্রি করার খুব চেষ্টা করে ছেলেটি। কিন্তু তার দুর্ভাগ্য! তার তৈরি কোনো সকেটই দোকানদার ক্রয় করেন না। এভাবেই আরো কিছু মাস কেটে যায় আর তখনও সে একটি সকেটও বিক্রি করতে পারেন নি। অন্য কোনো কাজ নেই। এদিকে পরিবার চালানোর জন্য টাকারও খুব প্রয়োজন। সব মিলিয়ে খুব খারাপ একটা অবস্থা। তাই খারাপ অবস্থাকে কিছুটা সামাল দেয়ার জন্য পরিচিতদের থেকে কিছু টাকা ধার, আর ঘরের কিছু আসবাবপত্র বিক্রি করে সে।
মাঝে মধ্যে হতাশ হয়ে পড়তো সে। 'এই ব্যবসা ছেড়ে দিয়ে আবার সেই পুরনো কাজে ফিরে যাই' এরকম চিন্তাও তার মাথায় বহুবার আসে। কিন্তু তার ভিতরের উৎসাহ - যেভাবেই হোক জিততে হবে তাকে। সফলতা অনেক বিফলতার পরেই আসে তাইনা!
কাছে যা টাকা ছিলো সব শেষ হয়ে গিয়ে; এবার কাজ করলে তবেই পরিবার চলবে এরকম পরিস্থিতিতে চলে আসে সে। আর হঠাৎই ভাগ্যের দরজা খোলার সূচনা ঘটলো। কোনো এক জায়গা থেকে ১ হাজার সকেটের অর্ডার আসে তার কাছে। তখন সে ব্যপারটি বিশ্বাসই করতে পারছিলো না। আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠে সে।
সেই প্রথম ১ হাজার সকেটের অর্ডার পাওয়া দিনটি এখন প্রায় ১০০ বছরেরও বেশি হয়ে গিয়েছে। আর সেই ছোট্ট ছেলেটার কোম্পানিতে এখন প্রায় দুই লক্ষেরও অধিক শ্রমিক শ্রম দেয়। আর তার বার্ষিক আয় এখন ৭০ বিলিয়ন ডলারেও বেশী। তার তৈরি পন্য এখন সারা বিশ্বেই বিক্রি হয়। নিজের একটা আলাদা সাম্রাজ্য তৈরি করেছে সে। কিন্তু যার কাছে কোনো শিক্ষাগত যোগ্যতা ছিলোনা, যার কাছে বানিজ্য করার জন্য মূলধন ছিলোনা, যার কাছে বানিজ্য করার কোনো অভিজ্ঞতা ছিলোনা সে কীভাবে এতো বড় সাফল্য অর্জন করলো!?
মাত্র একটা জিনিস; সেটা শুধুমাত্র তার আত্মবিশ্বাস। সে করতে পারবে এটা সে বিশ্বাস রেখেছিলো আর সেই বিশ্বাসের সাথে সে সর্বদা প্রচেষ্টা করে গিয়েছিলো। আর এই আত্মবিশ্বাসী ব্যক্তিটির নাম - Konosuke Matsushita(কোনোসুকে মাৎসুশিটা <1894-1989>)। বিশ্ববিখ্যাত ইলেকট্রনিক কোম্পানি পেনাসনিকের জন্মদাতা ইনি। একটা ছোট্ট ঘর থেকে শুরু করে আজ সারা বিশ্বের ঘরে ঘরে তার পন্য ব্যবহৃত হয়।
Konosuke Matsushita |
প্রিয় পাঠক,
আপনার আগামী দিনের সফল হওয়ার জন্য আজ অনেক বড় একটি ইচ্ছে শক্তির প্রয়োজন। আমার বাবা-মা আমার উপর অনেক ভরসা করে আছে,আমাকে পড়ালেখা করে অনেক বড় হতে হবে, আমার অফিসের মালিক আমাকে অনেক বিশ্বাস করবে; এগুলো কেবলই একেকটি সাধারণ সব ইচ্ছে। কিন্তু এর উপরও আমার যোগ্যতা আছে। যতোই বাধা আসুক সেগুলোকে পার করে আমি অবশ্যই জিততে পারবো! এই আত্মবিশ্বাসকে প্রথমে নিজেই নিজের মধ্যে আনতে হবে। প্রথমে নিজেই নিজের কাজের উপর ভরসা করতে হবে। তবেই দুনিয়া আপনার উপর ভরসা করবে।
এটা ছিলো একটি অশিক্ষিত গরীব ছেলের বিশ্ব জয় করার কাহিনি। সহজে হাল ছেড়ে দেওয়া ব্যক্তিদের আত্মবিশ্বাসী করতে অনুপ্রাণিত হবার কাহিনি।
সর্বদা প্রচেষ্টা ও পরিশ্রম যাই হয়ে যাক, যতোই বাধা আসুক আমি হাল ছাড়বো না!!! এগুলোই একদিন আপনাকে একটি সফল মানুষে রুপান্তরিত করবে।
1 Comments
Motivational story
ReplyDelete•Do Not Share Any Link.
Thank You•