মেয়েটার নাম ছিলো আফরিন। মেয়েটা স্কুল জীবন থেকেই নিরব নামের একটা ছেলের সাথে প্রেমের সম্পর্কে আবদ্ধ ছিলো। মেয়েটার যখন ২০ বছর তখন নিরবকে বিয়ে করে নেয়। আফরিন আর নিরব দুজনেই ছিলো নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। নিরব একটা গ্যারেজে কাজ করতো। যার বেতন ছিলো খুবই সামান্য। আর এই সামান্য বেতন দিয়ে তাদের সংসার চালানো কষ্টকর হয়ে পড়েছিলো। এই কষ্ট কে লাঘব করার জন্য আফরিন একটা ক্যাফেতে কাজ করা শুরু করে।
সারাদিন জীবীকা নির্বাহের টানে দুজনেই বাড়ির বাহিরে আর দিনশেষে বাসায় এসে একসাথে থেকে ক্লান্তির ছাপ ভুলে যাওয়া ; বছর খানেক এভাবেই কাটে আফরিন আর নিরবের। তাদের ভালোবাসা টা অটুট আর সুন্দর ছিলো তখনো। নিরব আফরিন কে অনেক ভালোবাসতো। দু'জনে জীবীকা নির্বাহ করে যতোই ভালো থাকনা কেন তবুও আফরিনের মনে হচ্ছিলো সে আর্থিক সমস্যায় ক্লান্ত। আফরিনের স্বপ্ন ছিলো নিরব কে বিয়ে করে বিলাসবহুল জীবন যাপন করবে। কিন্তু দারিদ্রতা তাকে তার স্বপ্ন পূরণ করতে বাধা দিচ্ছিলো।
প্রতিদিনের মতো আফরিন সেদিনো ক্যাফেতে যায় যেদিন টা ছিলো আফরিনের সাথে বৃদ্ধ লোকটার দেখা হওয়ার দিন। বৃদ্ধ লোকটার নাম ছিলো রফিক। রফিক টেবিলে বসলে অফরিন জিজ্ঞেস করেছিলো খাবার অর্ডার করুন স্যার। রফিক স্যান্ডুইচ অর্ডার করে। স্যান্ডুইচ রফিকের টেবিলে দেওয়ার সময় রফিক আফরিনের দিকে তাকিয়ে তাকে কেন্দ্র করে বললেন, "তুমি খুবই সুন্দর। তোমার মতো সুন্দরী মেয়ে এইরকম জায়গায় মানায় না। তুমি আমার কাছে চলে আসো।" আফরিন বিবাহিত নাকি অবিবাহিত কোনো কিছু না জেনেই রফিক আফরিনকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে দিলো। আফরিন ভেবেছিলো রফিক(বৃদ্ধ) সাহেব হয়তো মজাই করছে। আফরিনের ভাবনা টা নিছকই ভুল প্রমাণিত হলো। রফিক বলতেছে আমার বলা কথা গুলোকে মজা ভেবো না। আমি সিরিয়াস ভাবেই বলছি কথাগুলো। আফরিন নিরব আর তার ভালোবাসার কথা ভেবে রফিক সাহেবের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলো। অতঃপর রফিক একটা কার্ড রেখে বললেন তুমি যদি নিজের সিদ্ধান্ত কিংবা মত বদল করো তাহলে আমায় ফোন করো। কিংবা কার্ডে দেয়া ঠিকানায় চলে এসো। এটা বলে রফিক ক্যাফে ত্যাগ করলেন। আর আফরিন সেদিন ডিউটি শেষ হওয়ার আগেই বাসায় চলে যায়।
আফরিন বাসায় এসে দেখে নিরব কেমন বিমর্ষচিত্তে বসে আছে। কারণ জানতে চাইলে নিরব উত্তরে বলে, তার গ্যারেজের চাকরি টা চলে গেছে। আফরিন নিরবকে জড়িয়ে ধরে বললো চিন্তা করো না। সব ঠিক হয়ে যাবে। আমি তো আছি। ইত্যাদি স্বান্তনা স্বরূপ যা বলা লাগলো তাই তাই বললো আফরিন। কিন্তু মনের গভীর ভিতরে আফরিন তো দারিদ্রতায় ভুগতেছিলো। ওইদিন রাতে অনেক ভেবে আফরিন সিদ্ধান্ত নিলো; আর এই কষ্ট সহ্য করার নয়। সুখ পেতে হলে তার নিরব কে ছাড়তেই হবে। আর রাত পেড়িয়ে সকাল হতেই আফরিন নিরব কে না জানিয়েই বাসা থেকে বের হয়ে গেলো। আর সেই বৃদ্ধ রফিকের দেয়া সেই কার্ডের ঠিকানায় চলে গেলো। রফিক কে আফরিন জানালো যে, সে রফিকের প্রস্তাবে রাজি।
আর আফরিন রফিক কে সেদিনই বিয়ে করে নিলো। এদিকে নিরব ঘুম থেকে উঠে আফরিন কে না দেখে চিন্তায় পড়ে গেলো। কারণ সেদিন তো ক্যাফে বন্ধ ছিলো। নিরব ফোন করে খোঁজ নেয়ার চেষ্টা করলে প্রথমে কল বাজলেও রিসিভ হয়নি। আর তারপর থেকে নাম্বার টা বন্ধ পেলো। আর খোঁজ এই পেলো না নিরব। এদিকে আফরিন বৃদ্ধ রফিকের সাথে সংসার করতে শুরু করলো, যদিও এই সম্পর্ক টা আফরিনের কাছে অদ্ভুত লাগতেছিলো। কারণ, রফিক আফরিনের থেকে ৩০ বছরের বড় ছিলো।
অবশেষে আফরিন এবার সত্যিকারের ভালোবাসা খুঁজে পেলো। মানে টাকার প্রতি ভালবাসা। আফরিন রফিকের কাছে যা চাইতো তাই পাইতো।
কিন্তু সময়ের সাথে সাথে রফিকের আসল মানসিক রূপ প্রকাশ পাচ্ছিলো। রফিক আফরিনের সাথে খারাপ ব্যবহার শুরু করে দেয়। এমনকি গালি-গালাজও করে। কারো সাথে যোগাযোগ করতে দিতো না। রফিক আফরিনের কাছ থেকে ফোন টাও কেড়ে নিয়েছিলো। শুধুমাত্র রফিকের সাথে ছাড়া একা বাহিরে যাওয়ার অনুমতি ছিলো না। এক পর্যায়ে এসে আফরিন দেখলো, তার মনে আর্থিক যতো লালসা ছিলো তার সব পূরণ হলো। কিন্তু এসব পূরণ করতে সে তার ভালোবাসাই হারিয়ে ফেললো। এভাবেই রফিকের অত্যাচারে কেটে যায় বছর পাঁচেক।
একদিন রফিক ব্যবসার কাজে দেশের বাইরে যায়। আর এই সুযোগে আফরিন বাসা থেকে পালায়। আর নিরবের কাছে যায়। সে দেখলো নিরবের ছোট্ট বাড়ি টা এখন বড় বিল্ডিংয়ে পরিনত। সে নিরব কে দেখতে পেলো। আর জড়িয়ে ধরলো। সে তার করা জীবনের বড় ভুল টা বললো। আর ভীষণ ভাবে হ্মমা চাইলো। নিরব রেগে উৎকন্ঠিত হয়ে বলা শুরু করলো.....
"বছরের পর বছর তোমার কি হয়েছিলো, কোথায় চলে গিয়েছিলে এসব নিয়ে আমি অনেক চিন্তিত ছিলাম। এখন ভুল স্বীকার করে হ্মমা চেয়ে কিছু হবে না। অনেক দেরি হয়ে গেছে। আমি এখন সুখে আছি। আমার সব জেনেই আমায় একজন বিয়ে করে নেয়। আর আমি এখন তার সন্তানের বাবাও হয়েছি। আর আমার এখন নিজেরই গ্যারেজ আছে। আর সেই গ্যারেজের সংখ্যা একের অধিক। আমরা দু'জন একসাথে যেভাবে স্বপ্ন দেখেছিলাম আমি সেভাবেই আছি। শুধু তোমার জায়গায় অন্য কাউকে বসানো লাগছে সেই স্বপ্ন পূরনের বাস্তব সময় টাতে। আর যাকে বসানো হয়েছে তাকে আমার প্রতিটি সময়েই সঠিক বলে মনে হয়। তোমার বর্তমানের এই অবস্থার মূলে আছে তোমার ধৈর্যের অভাব। তুমি ভুলে গিয়েছিলে 'সবুরে মেওয়া ফলে' এই কথাটা। তুমি একেবারে সব পেতে চেয়েছিলে। তুমি যেখান থেকে এসেছো সেখানে চলে যাও। আমার সুন্দর জীবনে দয়া করে অশান্তি তৈরী করো না।"
আফরিন বুঝতে পেরেছিলো যে, সে এগুলোর প্রাপ্য। সে আর নিরবের জীবনে ফিরে যেতে পারবে না। নিরব তাকে আর গ্রহণ করবে না। এসব ভেবে সে রফিকের অত্যাচার-শালায় চলে গেলো।
রফিক দেশে ফিরে আসে। আর কীভাবেই যেনো যেনে যায় যে, আফরিন তার পুরনো স্বামীর সাথে দেখা করতে গিয়েছিলো! জানার পর থেকে তখন রফিকের মধ্যে শুধু খারাপ ব্যবহার আর গালি-গালাজ সীমাবদ্ধ ছিলো না হাত,লাঠি ইত্যাদিও ছিলো আফরিন কে অত্যারের জন্য সীমাবদ্ধ। কয়েক বছরের মধ্যে রফিক আরেকটা অল্প বয়সি মেয়েকে বিয়ে করে নেয়। আফরিন কোনো এক ভাবে জানতে পারলো তার সাথে যা ঘটলো এর আগেও অনেক মেয়ের সঙ্গে ঠিক এমনটাই ঘটিয়ে আসছিলো রফিক। আর বয়স্ক রফিকের বর্তমান বিয়ে করা অল্প বয়সি মেয়েটা আফরিন কে তাড়িয়ে দেয়।
Old Man Married Young Girl |
শেষ পরিনতি টা অবশ্যই আফরিনের প্রাপ্য ছিলো। ফলাফল কি আসলো - 'অতি লোভে তাতি নষ্ট'
2 Comments
সবুরে মেওয়া ফলে।
ReplyDeleteলোভ তাকে সবুর করাতেই ভুলিয়ে দিয়েছিলো!
Delete•Do Not Share Any Link.
Thank You•