আরিফ আজাদ
সময়টা ছিলো ২০২০ সাল। প্রথমে করোনা সংক্রমণ, তারপর সংক্রমণ ঠেকাতে লকডাউনের গন্ডি। লকডাউনের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস আদালত, কর্মসংস্থান গুলো বন্ধে রূপান্তরিত হয়।
সবারই অলস সময় কাটছিলো। সেই সাথে আমারও। অধিকাংশ আমরাই অলস সময় তথা লকডাউনের দিনগুলো ফোন টিপে টিপে পার করছিলাম। একটু উন্নত মস্তিষ্কের মানুষেরা বই পড়ে পার করছিলো সেই সময়।
তখন আমি ভেবেই নিয়েছিলাম কোনো ওয়েব সিরিজ কিংবা ফেসবুকিং করে করেই কাটিয়ে দিবো লকডাউনের সময়। হঠাৎই একদিন ফেসবুকিং সময়ে এক বন্ধুকে একটা বইয়ের রিভিউ দিতে দেখলাম স্টোরিতে। বইটা নাকি প্লেস্টোরেও পাওয়া যায়। এর আগে কখনো জেনারেল বই মানে পড়াশোনার বইয়ের বাইরে ভিন্ন কোনো বই পড়িনি আমি। আর অভ্যাসও নেই।
তখন বইয়ের নামটাই বইটার প্রতি আগ্রহ বাড়িয়ে দিয়েছিলো। কোন টপিকের বই বা কোন ক্যাটাগরির তা না জেনেই প্লেস্টোর থেকে ডাউনলোড করে নিলাম বইটি। আমি "প্যারাডক্সিকাল সাজিদ" বইটির সমন্ধেই এতোক্ষণ বলতেছিলাম।
তখনও বইটির লেখক ছিলো আমার কাছে অচেনা। অথচ সেই সময় বইটির লেখকের লেখক হিসেবে বেশ জনপ্রিয়তা ছিলো ; আর এখনো! লেখক নিয়ে মাথাব্যথা ছিলোনা সেসময়।
বই পড়ার অভ্যাস না থাকায় প্যারাডক্সিকাল সাজিদ বইটি প্রতিদিন একটু আধটু পড়তাম। পড়তে পড়তে বুঝতে পারলাম যে বইটি ছিলো আস্তিক বনাম নাস্তিকের তর্ক বিতর্কের সমন্বয়ে লেখা। বইটি পড়ে খুব উপভোগ করেছিলাম আমি। অল্প অল্প করে পড়ায় মাস খানেকের মধ্যে বইটা পড়া শেষ করি আমি। বই পড়ে শুধু উপভোগ নয় শিক্ষাগ্রহণও করতে হয় এই বুঝটা তখন আমার মাঝে ছিলো না।
বই কিনে পড়ার মনোভাবও তখন আমার মাঝে তৈরি হয়নি। বইয়ের সাথে সম্পর্ক করতে না চাইলেও বই কিন্তু আমার সাথে সম্পর্ক করতে খুব ইচ্ছুক। ব্যাপারটা শুনতে অবাক লাগলো তাইনা। যাক ব্যাপার টা আপনাদের বুঝানোর চেষ্টা করা যাক!
আমার এক শ্রদ্ধেয় ভালোবাসার ভাই (পরিচয় সূচনা : ফেসবুক) পরাপর মাসের ব্যবধানে পর্যায়ক্রমে দুটি বই উপহার স্বরূপ আমায় দেন। প্রথম বইটা ছিলো ডাঃ খন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রাহিমাহুল্লাহ) স্যারের রাহে বেলায়াত বই। আর দ্বিতীয় বইটা ছিলো আরিফ আজাদের লেখা বেলা ফুরাবার আগে বই। কেউ আমায় বই উপহার দিলো সেটা না পড়ে সাজিয়ে রাখলাম; ব্যাপারটা একদমই ভালো দেখায় না। আমি অবসর সময়ে পড়বো বলে 'বেলা ফুরাবার আগে' বইটি আগে পড়ার জন্য মনস্থির করলাম। এবার তো বুঝলেন আমি কেনো বলেছিলাম যে বই আমার সাথে সম্পর্ক করতে ইচ্ছুক!
আরে বইটির লেখকের নাম কোথায় যেনো দেখেছি!? হ্যাঁ মনে পড়েছে 'প্যারাডক্সিকাল সাজিদ' বইতে এই লেখকের নাম দেখেছিলাম। প্যারাডক্সিকাল সাজিদ বইয়ের লেখক ছিলেন তিনি। তাহলে উনি কি জনপ্রিয় একজন লেখক। আমি ছাড়া কি এই লেখক আরিফ আজাদ সম্পর্কে সবাই জানে!? আর উনার বই পড়ুয়া ভক্তের সংখ্যা কি অনেক? কি তার পরিচয়? আরো অনেক প্রশ্ন জাগে মনে!
আরিফ আজাদ |
সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাওয়ার জন্য প্রথমে গুগল, তারপর ফেসবুক, টুইটার সবখানেই আরিফ আজাদ লিখে অনুসন্ধান করলাম। আসলেই তো তিনি এখজন জনপ্রিয় লেখক বর্তমানে। বহু ইউটিউবারের নতুন কন্টেন্টের কারণ তিনি। বিভিন্ন ব্লগ সাইট, ওয়েবসাইটেও তার সম্পর্কে আর্টিকেলের সন্ধান মিলে। বড় মাপের ব্যক্তিরাও তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। সেসময় একটা ফেসবুক পেজের পোস্ট পড়ে জানতে পারলাম যে, আমাদের দেশের সুপরিচিত অনলাইন বইয়ের দোকান 'রকমারি.কম' এ ওই বছর আরিফ আজাদের বইগুলোই সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছিলো। ওই পোস্টে লেখা তথ্যগুলো ছিলো আমায় অবাক করে দেওয়ার কারণ। বিষয়টি জানার জন্য তৎক্ষনাৎ আমি রকমারি.কমে ভিজিট করি। লেখক লিডারবোর্ডের এক নম্বরে দেখতে পেলাম তাকে।
অবাক করে দেওয়ার মতো ব্যাপার এখানেই শেষ নয়। শুনলে আপনিও অবাক হবেন, চমকে যাবেন!
আরিফ আজাদকে এতো এতো মানুষ নামে চিনলেও মুখমন্ডলে খুব কম মানুষই চিনে। কীভাবে চিনবে!? তিনি তো তার লেখা কথাগুলোর মতো তার মুখমন্ডল(পিকচার) কখনো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পাবলিশ করেননি। মুখমন্ডলের ব্যাপারে নিজেকে রেখেছেন আড়ালে। গুগলেও তার দুটি ছবি ব্যতীত আর কোনো ছবির সন্ধান মিলেনা। তার দ্বারা আবারও প্রমাণ পেলাম যে, নিজেকে লোক সম্মুখে না এনেও জনপ্রিয় হয়ে সবার ভালোবাসা অর্জন করা যায়। চমকে দেওয়া এই সচ্চরিত্র ব্যক্তিটির জীবনবৃত্তান্ত জানবেন না!?
আরিফ আজাদ পরিচিতি
আরিফ আজাদ ১৯৯০ সালের ৭ই জানুয়ারি বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পূর্ণ নাম মোহাম্মদ আরিফ আজাদ। এই আরিফ আজাদের পরিবার সম্পর্কে জানার খুব আগ্রহ জাগে তাইনা? কিন্তু এখানেও অবাক করার ব্যপার যোগ করেছেন তিনি। তিনি তার পরিবার সম্পর্কে কোনো তথ্যই পাবলিশ করেননি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ; এমনকি কোনো ইন্টারভিউতেও নয়। তিনি চট্টগ্রাম জেলা স্কুল থেকে মাধ্যমিক পাশ এবং সেখানের একটি সরকারি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। তারপর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষা লাভ করে তিনি লেখালেখির পেশায় মন দেন। লেখালেখি থেকেই এখন একজন বড় মাপের লেখক সে। শুধু লেখক বললে ভুল হবে তিনি একজন সফল লেখক।
তার লেখা প্রথম 'প্যারাডক্সিকাল সাজিদ' বইটি প্রকাশ পায় ২০১৭ সালের একুশে বইমেলার মাধ্যমে। এই বইটির মাধ্যমেই তার জনপ্রিয়তার সূচনা ঘটেছিলো। নিয়ে গিয়েছিলো জনপ্রিয়তার কাতারে। বাড়িয়ে দেয় ভক্ত, প্রাপ্তি ঘটে ভালোবাসার মানুষের। তার এই বইটির উছিলায় অসংখ্য মানুষ হেদায়েতের পথ দেখেছে। অনেক যুবক বইটি পড়ে হিমু নয় সাজিদের চরিত্র গঠন করেছিলো নিজের মধ্যে।
এরপর ২০১৯ সালের একুশে বইমেলার মাধ্যমে 'প্যারাডক্সিকাল সাজিদ ২' নামে আরেকটা বই বের করেন লেখক আরিফ আজাদ। এই বইটিও বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করে বই প্রেমীদের মাঝে।
শুধু এই দুটি বই নয় আরোও অনেক বই লিখেছেন আরিফ আজাদ।
লেখক আরিফ আজাদ তার লেখার মাধ্যমে অনেক পুরস্কার, সম্মাননা অর্জন করে নিয়েছেন। ২০১৭ থেকে সাল ২০২০ পর্যন্ত তিনি একটানা ৪ বার একুশে বইমেলার সেরা এওয়ার্ড লাভ করেন। রকমারি ডটকম থেকেও পুরষ্কার লাভ করেন তিনি। এছাড়াও অসংখ্য পুরষ্কারের মালিক এখন তিনি।
আরিফ আজাদের বৈবাহিক জীবন সম্পর্কে যতোটুকু জানি, তার বিয়ে হয় পারিবারিক ভাবে। তার স্ত্রী বিয়ের আগে জানতেনই না যে তার বিয়ে হচ্ছে একজন জনপ্রিয় লেখকের সাথে!
আরিফ আজাদের ওজন, উচ্চতা এবং অন্যায় বিষয়াবলি
উচ্চতা - ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি
ওজন - ৭০ কেজি
চোখের রং - গাঢ়ো বাদামী
চুলের রং - কালো
প্রিয় রং - কালো
প্রিয় আলেম - ডাঃ জাকির নায়েক
প্রিয় ক্রিকেটার - সাকিব আল হাসান এবং হাশিম আমলা
আরিফ আজাদের লেখা বইগুলো :
- প্যারাডক্সিকাল সাজিদ ১ 📚
- প্যারাডক্সিকাল সাজিদ ২ 📚
- তর্কে বিতর্কে আরজ আলী 📚
- আরজ আলী সমীপে 📚
- মা, মা, মা এবং বাবা 📚
- নবী জীবনের গল্প 📚
- জীবন যেখানে যেমন 📚
- বেলা ফুরাবার আগে 📚
- প্রত্যাবর্তন 📚
- গল্পগুলো অন্যরকম 📚
- জবাব 📚
- আসমানের আয়োজন 📚
- সত্যকথন 📚
একসময় ছেলেরা চাইতো হিমু হতে,এখন চায় সাজিদ হতে।আরিফ আজাদ যুবকদেরকে হিমুথেকে সাজিদে রূপান্তরিত করতে সক্ষম হয়েছে।এটাই তার বড় প্রাপ্তি!
সামাজিক যোগাযোগ সাইটে আরিফ আজাদ
আরিফ আজাদকে সোশ্যাল এক্টিভিটিস হিসেবেও অভিহিত করা হয়ে থাকে। তিনি বইতে লেখার পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও লেখালেখি করেন পোস্ট কিংবা স্টাটাস আকারে।
*ফেসবুকে তার এক্টিভিটি দেখতে গেলে, তার একটা অফিশিয়াল একাউন্ট আছে। সেই একাউন্টের ফলোয়ার সংখ্যা সাড়ে চার লাখের অধিক।
আরিফ আজাদ অফিশিয়াল ফেসবুক লিংক : https://www.facebook.com/arifazad.official
প্রায় সাড়ে ছয় লাখ ছুঁই ছুঁই লাইকের একটা ফেসবুক পেইজ আছে তার। পেইজটি তৈরি করা হয়েছিলো ২০১৮ সালের ৯ই মার্চে।
আরিফ আজাদ অফিশিয়াল ফেসবুক পেইজ লিংক : https://www.facebook.com/arifazad.bd
আরিফ আজাদের নিজস্ব একটা ফেসবুক গ্রুপ আছে। গ্রুপ টি সে নিজে এডমিন্সি সহ তার বিশ্বস্ত কিছু লোক দ্বারা পরিচালিত হয়ে থাকে। গ্রুপটির সদস্য সংখ্যা সাড়ে চার লাখের অধিক। প্রথমে গ্রুপটির নাম ছিলো "'আরিফ আজাদ' বলেন"। পরে নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় "'আরিফ আজাদ' কহেন"। যে নামটি বর্তমানেও বহাল আছে। গ্রুপটি তৈরি হয়েছিলো ২০২০ সালের ১৬ এপ্রিল তারিখে। তিনি মাঝেমধ্যে গ্রুপটিতে পোস্ট করেন।
আরিফ আজাদ অফিশিয়াল ফেসবুক গ্রুপ লিংক : https://www.facebook.com/groups/arifazadbolen/?ref=share
আরিফ আজাদের লেখা বইয়ের নামেও ফেসবুকে বিভিন্ন গ্রুপ দেখতে পাওয়া যায়। তার ভক্তদের দ্বারা খোলা গ্রুপগুলো।
*টুইটারেও আরিফ আজাদের এক্টিভিটি বেশ লক্ষ্য করার মতো। ২০১৭ সালের মার্চের দিকে তার অফিশিয়াল টুইটার একাউন্টটি খোলা হয়েছিলো। এই প্লাটফর্মে বাংলার পাশাপাশি ইংরেজি ভাষাতেও টুইট করতেন তিনি। টুইটারে তার ফলোয়ার সংখ্যা প্রায় ৩৩ হাজার।
আরিফ আজাদ অফিশিয়াল টুইটার লিংক : https://twitter.com/me_arifazad?t=_UovEedNp6wZb0XufBDTxA&s=09
*ইনস্টাগ্রামেও রয়েছেন লেখক আরিফ আজাদ।
আরিফ আজাদ ইনস্টাগ্রাম লিংক : https://instagram.com/me.arifazad?utm_medium=copy_link
চলতি বছরেই তিনি একটি ইউটিউব চ্যানেলের যাত্রা শুরু করেন। চ্যানেলটি তৈরি করা হয়েছিলো এই বছরের জুলাইতে। তার চ্যানেলের সাবস্ক্রাইব সংখ্যা আশি হাজার ছুঁই ছুঁই। তার চ্যানেলের ডেসক্রিপশন বক্সের লেখাগুলো আমার নজর কারে। প্রিয় পাঠক, আপনারাও পড়ে দেখুন কি সুন্দর লেখা-
4 Comments
Assalamualaikum.. unar motion jonopriyo bektir somporke kisu Bolte gele proman Soho Bolte hobe.. Uni ese bolsen? Eita ami... ?? Bolse?? naaa.. are apni maybe chacchilen ekhane ese uni bolben eita Ami na vaai.. ei nen AMR chobi... 💤
ReplyDeleteওয়ালাইকুম আসসালাম। প্রথমেই আপনার মূল্যবান মন্তব্যের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আর এতো দেরি করে আপনার মন্তব্যের রিপ্লাই দেওয়ার জন্য ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।
Deleteশুনুন পাঠক,
জনপ্রিয় ব্যক্তির(আরিফ আজাদ) সম্পর্কে আমি প্রমাণ সহকারে লিখেছি। আর সঠিক সোর্স থেকেই অনেক যাচাই-বাছাই করেই উনার সম্পর্কে লেখার চেষ্টা করেছি। আর ছবির ব্যাপার? ছবিটি আমি গুগলের একটা আর্টিকেল সাইট থেকে সংগ্রহ করেছি। যদি প্রমাণ ছাড়াই আমি যেকোনো কিছু লিখতাম তাহলে প্রতিদিনই এই ব্লগসাইটে একটা করে আর্টিকেল দেখতে পেতেন হয়তো। আশা করি আমি বুঝাতে সক্ষম হয়েছি। এরপরও জিগ্যাসা থাকলে করিতে পারেন! আর ভুল থাকলে ধরিয়ে দিবেন; যাতে নিজেকে সেই ভুল থেকে সংশোধনের দিকে নিয়ে যেতে পারি।
আবারও ধন্যবাদ। 🖤
Comment taa jeno public Hy... Naile byjhbo sobartai amn approve koren nai..
ReplyDeleteAllah Hafez..
ব্যক্তিগত সমস্যার কারণে আপনার মন্তব্য পাবলিশ করা তো দূরের কথা ব্লগিং থেকেই বিচ্যুত হয়ে গিয়েছিলাম প্রায়।
Delete*
আপনার মন্তব্য পাবলিশ করে দেয়া সহ অন্যান্য আর্টিকেলের মন্তব্যও পাবলিশ করে দেয়া হয়েছে।
আল্লাহ হাফেজ।
•Do Not Share Any Link.
Thank You•