Ticker

7/recent/ticker-posts

History of Inventing Numbers | সংখ্যা আবিষ্কারের ইতিহাস

Number System
Picture : Number System Template 

মানব জাতির কোনো কিছু গণনা করার চেষ্টা থেকে সংখ্যার সূচনা ঘটেছে। কিন্তু সভ্যতার শুরু থেকে সংখ্যা দিয়ে গণনা করার ব্যাপারটা বা সংখ্যা পদ্ধতি এতোটা উন্নত ছিলো না। গণনার নানান পর্যায়ে মানুষ কাঠি, হাতের আঙ্গুল, ঝিনুক, নুড়িপাথর, রশিতে গিরা দিয়ে, মাটিতে অথবা দেয়ালে দাগ কেটে গণনাকার্য নির্ণয় করতো। এইভাবে গণনা শিক্ষার জন্য নানাবিধ সাংকেতিক চিহ্ন, বর্ণ, সংখ্যা প্রভৃতি ব্যবহার করা হতো।

সভ্যতার শুরুর দিকে মানুষের গণনার জন্য বড় বড় সংখ্যার প্রয়োজন হতো না। তাই এ সকল পদ্ধতি সেই সময়ের গণনার যেকোনো প্রয়োজন সমূহ পূরণ করে ফেলতে পারতো। কিন্তু ক্রমেই কৃষিকার্য অথবা পশুপালনে অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে মানুষের বড় সংখ্যা ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলো। আর এর প্রভাবে দাগ টেনে সংখ্যা গণনার পদ্ধতিকেও উন্নত করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলো। সুমেরীয় ও সমসাময়িক অন্যান্য সভ্যতার মানুষ খ্রিষ্টপূর্ব চার হাজার বছর আগে মাটিতে দাগ টেনেই অনেক বড় সংখ্যা হিসাব করার জন্য যেই পদ্ধতি ব্যবহার করতো তাকে ট্যালি বলা হয়। এই পদ্ধতিতে মাটিতে চারটি দাগ টেনে চার বোঝানোর পর পাঁচ সংখ্যা বুঝাতে চারটি দাগকে আড়াআড়ি ভাবে কেটে দেয়া হতো। এইভাবে চারটি দাগ ও এর উপর দিয়ে আড়াআড়ি একটি দাগ পাঁচ সংখ্যা মানের একটি গ্রুপকে বুঝানো হতো। এইভাবে পাঁচ সংখ্যার একাধিক গ্রুপ ব্যবহার করে সেইসময় বেশ কিছু বড় সংখ্যাকে সহজেই প্রকাশ করা সম্ভব হতো। এইরকম ট্যালি গণনার সংখ্যা পদ্ধতি পৃথিবীর অনেক জায়গায় আজও প্রচলিত আছে। 

কিন্তু এভাবেও অনেক বড় সংখ্যা প্রকাশের ক্ষেত্রে যেমন হাজার বা লক্ষের ঘরের সংখ্যা প্রকাশে সমস্যা দেখা দিতো। মিশরীয় সভ্যতার মানুষেরা এই সমস্যা প্রথম অনুভব করে। আমরা জানি, অনেক বড় বড় স্থাপনার কাজ করেছে মিশরীয়রা; যার মধ্যে অন্যতম বিশাল বিশাল সব অত্যাশ্চর্য পিরামিড তৈরি। সুতরাং অবশ্যই তাদের বড় সংখ্যার প্রয়োজন পড়েছিলো। ফলে খ্রিষ্টপূর্ব ৩,৪০০ সালে মিশরীয়রা হায়ারোগ্লিফিক্স (Hieroglyphics) চিহ্ন বা সংখ্যা পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে সর্বপ্রথম গণনার কাজে লিখিত সংখ্যা বা চিহ্নের প্রচলন শুরু করে। 

মিশরীয়দের এই গণনা ব্যবস্থা সম্প্রতি সময়ে দুর্বোধ্য মনে হলেও এই ব্যবস্থা বা পদ্ধতি সেসময়ে অনেক বড় বড় সংখ্যাকে আপাত সহজ পদ্ধতিতে প্রকাশ করা সম্ভব হতো। এই পদ্ধতিতে চিহ্নের অবস্থানক্রম গুরুত্বপূর্ণ না হলেও হিসাবের সুবিধার্থে এইখানে বড় সংখ্যা সূচক প্রতীকটিকে বামপাশে এবং পর থেকে ক্রমানুসারে ছোট সংখ্যা সূচক প্রতীক গুলোকে ডান পাশে বসানো হতো। এ পদ্ধতিতে যোগ ও বিয়োগের ক্ষেত্রে কেবল মাত্র সংখ্যা দুটির প্রতীককে একীভূত করে নিলেও চলতো।

ancient number system
চিত্র : বিভিন্ন সংখ্যা পদ্ধতির টেবিল অথবা ছক

রোমানরা তাদের নিজস্ব বর্নমালা ব্যবহারের মাধ্যমে খ্রীস্টপূর্ব ৩,৪০০ সালে রোমান (Roman) সংখ্যা পদ্ধতি চালু করে। তারা রোমান বর্ণমালার বিভিন্ন হরফ ব্যবহার করতো সংখ্যা বোঝানোর জন্য। যেমন ১-১০ পর্যন্ত সংখ্যা বুঝাতে রোমান সংখ্যা পদ্ধতিতে যথাক্রমে — I, II, III, IV, V, VI, VII, VIII, IX ও X এই রোমান হরফ গুলো ব্যবহার হতো। এই সংখ্যা পদ্ধতির ব্যবহার এখনো কিছু ক্ষেত্রে রয়ে গেছে। 

সুমেরীয় সভ্যতার উওরসূরি ব্যাবলনীয় সভ্যতার ষাটভিত্তিক একটি সংখ্যা পদ্ধতি ব্যবহৃত হতো খ্রিষ্টপূর্ব দুই হাজার শতকে। ব্যাবলনীয় এই গণনা ব্যবস্থা এখনো আমরা সময় গণনার ক্ষেত্রে ব্যবহার করে থাকি। যেমন — ৬০ সেকেন্ডে ০১ মিনিট অথবা ৬০ মিনিটে ০১ ঘন্টা ইত্যাদি। সমসাময়িক সভ্যতার মধ্যে এসময় মায়া সভ্যতার গণনার জন্য মেয়ান (Mayan) পদ্ধতি ব্যবহৃত হতো। 

উপরে উল্লেখ্য বর্ননা বা লেখাগুলোই সংখ্যা আবিষ্কারের ইতিহাসের অংশ। যেগুলো থেকে সংখ্যা আবিষ্কার সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া সম্ভব!

Post a Comment

0 Comments