Ticker

7/recent/ticker-posts

Sadat Hossain | Son of Madaripur [A Storyteller]

Sadat Hossain
Sadat Hossain 

চিনেন তো লেখক সাদাত হোসাইনকে? অনেকেই হয়তো বলবেন হ্যাঁ চিনবো না ক্যান; তবে উনাকে চিনে থাকলেও সেরকম ভাবে জানি না। হ্যাঁ পাঠকবৃন্দ, আপনার  কাঙ্খিত বিষয় নিয়েই লিখবো ক্ষুদ্র ভাবাপন্ন আমি। যখন ভেবেই নিয়েছিলাম উনাকে নিয়ে লিখবো; তো ভাবার পর তার সম্পর্কে জানার চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছিলাম। সাধারণ ভাবেই সাদাত হোসাইনের যেসব বিষয় আমাদের জানার আগ্রহ সেসব তথ্য সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছি।

এই ভার্চুয়াল যুগে যেকোনো তথ্য পাওয়া খুব সহজলভ্য। কিন্তু সঠিক তথা গুজবহীন তথ্য সংগ্রহ করা চ্যালেঞ্জের বিষয় বটে। সেই চ্যালেঞ্জ টি গ্রহণ করেছিলাম তার জীবনী আপনাদের সম্মুখে তুলে ধরবো বলে। আমার আশা, সাদাত হোসাইন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য গুলো আপনাদের মুগ্ধ করবে আর সেই সাথে অনুপ্রানিতও করবে বটে!
তো চলুন আজকের আর্টিকেলটি পড়া শুরু করি...

সাদাত হোসাইন সম্পর্কে বিস্তারিত 

পরিবার পরিচিতি :

লেখক সাদাত হোসাইন ১৯৮৪ সালের ২১শে মে মাদারীপুর জেলার কালকিনি থানার কয়ারিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মোহাম্মদ হেদায়েত উল্লাহ বেপারী এবং মাতার নাম নাসরিন আলো। তারা দুই ভাই এক বোন। তিনি সবার বড়। তার ভাই জামাল আর তিনি পিঠাপিঠি। আর তার বোন তার চেয়ে পনেরো বছরের ছোট। তার বোনের নাম তাসপিয়া। সাদাত হোসাইনের স্ত্রীর নাম উম্মে নুসরাত আরা। তাদের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। সাদাত হোসাইনের কন্যার নাম সারিনা সাদাত নোরা। 

সূচনা:

সাদাত হোসাইন লেখালেখি বা গল্প নিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করতে চেয়েছিলেন। তার এই চাওয়ায় ছিলোনা কারো অনুপ্রেরণা। এমনকি তার বাবা-মাও চাইতেন না যে সে তার ক্যারিয়ার লেখালেখি বা গল্পকার হিসেবে বেছে নিক। 
তাকে নিয়ে জানতে গিয়ে আমি খুব অবাক হই। অবাক হওয়ার কারণ, তিনি যেই গ্রামে বেড়ে উঠে সেই গ্রামটি আমার জেলায় অবস্থিত। অর্থাৎ, সাদাত হোসাইনের জন্ম মাদারীপুর জেলার কালকিনি থানার কয়ারিয়া গ্রামে। 
সেসময় তার গ্রামে ইলেক্ট্রিসিটি ছিলোনা, রেডিও-টেলিভিশন ছিলোনা, ছিলোনা পত্রপত্রিকা। তিনি যেই পরিবারে বেড়ে উঠেছিলেন ওই পরিবারে বই পড়ার পরিবেশে এই ছিলোনা। একমাত্র তার গল্প শোনার মাধ্যম ছিলো তার মা, নানি আর দাদি। ওই গল্প শুনে শুনে এমন একটা বিপ্লব ঘটালো যে তার মা, নানি-দাদিদের থেকে শোনা গল্পগুলো সে আবার ছোট্ট বাচ্চাদের শুনাতো এবং সেই গল্পের সাথে এমন কিছু গল্প সে যুক্ত করে দিচ্ছে যে সে আগে কখনো শোনেনি। অর্থাৎ তাৎক্ষণিক বানিয়ে বানিয়ে গল্পগুলো বলছিলো। তখন তার মনে হয়েছিলো গল্প বলা বা তৈরি করার সহজাত ক্ষমতা তার আছে। 

সাদাত হোসাইনের শৈশবের খুনসুটি ভাবনা আর সুশ্রী গল্প:

তার বাড়ির পাশে একটা নদী আছে; যে সেই নদীর খেয়া নৌকার মাঝি হবেন তিনি। আর হচ্ছে, আইসক্রিম বিক্রি করতো একজন ; এটা দেখে ভাবতেন তিনি এখজন আইসক্রিম ওয়ালা হবেন, আর ছোট বাচ্চারা হ্যামিলনের বেশী ওয়ালার মতো তার পিছু ছুটবে। তারপর ছাপানো অক্ষরে তার নাম দেখার প্রচন্ড আগ্রহ ছিলো। তিনি খেয়াল করতে লাগলেন, বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার ভাবনা গুলো পরিবর্তন হচ্ছিলো আর ইচ্ছে গুলোও বদলাচ্ছিলো। অতঃপর ইচ্ছেটা গল্পকার বা গল্পলেখক পর্যায়ে এসে তা বাস্তব রূপ নিলো।
তিনি গ্রামে জন্মগ্রহণ আর সেখানে শৈশব কাটিয়ে শ্রেষ্ঠ শৈশব কাটিয়েছেন বলে এটা বোধ করেন। ছোট থেকেই তার বড় ইচ্ছে ছিলো তার নাম ছাপা অক্ষরে দেখবেন। এটা নিয়েই ছোট একটা উপভোগীয় গল্প শোনা যাক—
তিনি তখন চতুর্থ শ্রেনীতে পড়তেন। তার বাবা যখন তার মায়ের জন্য শাড়ি আনতেন, তখন দেখতেন শাড়ির ভিতরে প্রত্রিকা দেয়া থাকতো। তিনি একদিন পত্রিকাগুলো খুললেন। পত্রিকা টি ছিলো ইত্তেফাক পত্রিকা। পত্রিকার এক অংশে দেখলেন ঢাকার বাচ্চাদের লেখা কবিতা। তিনি পড়তে লাগলেন। হঠাৎ খেয়াল করে দেখলেন, কবিতাটি লিখেছেন সাদাত হোসেন নামের কেউ। কিন্তু তিনি তো কোনো কবিতা লেখেননি। দেখলেন এই সাদাত হোসেনও চতুর্থ শ্রেনীতে পড়ে। এটা দেখে তিনি খুব চমকে গিয়েছিলেন। চমকে যাওয়ার পর তার মধ্যে দুটি অনুভূতি কাজ করেছিলো। একটা হচ্ছে, তার নাম ছাপা অক্ষরে; মূলত তিনি নন। অপরটি হচ্ছে, যেখানে তিনি বড় হচ্ছে সেখান থেকে তার নাম ছাপার অক্ষরে দেখা সম্ভব না। 
একদিন তার মায়ের নতুন শাড়ির ভিতরে পাওয়া পত্রিকা থেকে অক্ষরগুলো আলাদা আলাদা করে কাটলেন। ভাত কিন্তু আঠার কাজ করে ; সেই ভাতকে কাজে লাগিয়ে তিনি পত্রিকা থেকে কাটা দুই লাইনের কবিতাটি তার খাতার উপর লাগালেন। তারপর কবিতাটির নিচে কাটা অক্ষরগুলো ক্রমানুসারে লাগিয়ে নিজের নামটি লিখলেন। (আরেহ এই সাদাত হোসাইনই তিনি)
এটা ভেবে তিনি বিহ্বল হয়ে অনেকক্ষণ খাতার দিকে তাকিয়ে রইলেন। এই ব্যাপার টা দেখে তার বাড়ির পাশের দেলোয়ার ভাই আকস্মিক হয়ে তখনকার সময়ের টাকা দামের ইকো নামের লাল কলমটি সাদাত হোসাইনকে দিলেন। সেসময় লাল কলমের কালি তার কাছে বিশেষ প্রাপ্তি বলে মনে হতো। 
এমন না যে তিনি ছোটবেলা থেকে ছাপার অক্ষরে তার নাম দেখার স্বপ্ন দেখছেন বলে ছোটবেলা থেকেই তিনি পুরোদমে লেখালেখি শুরু করেছেন! অষ্টম, নবম, দশম শ্রেণিতে তার স্কুলের প্রতিযোগিতায় নিজ থেকে কবিতা তৈরি করে লিখতেন। সেই লেখাগুলোই অন্য শিক্ষার্থীরা প্রতিযোগিতায় পাঠ করতো। এসব দেখে তার শিক্ষকরা তাকে খুব অনুপ্রাণিত করতো। 

সাদাত হোসাইনের লেখক যাত্রা :

স্বাভাবিকভাবেই আমাদের দেশের একজন লেখকের যাত্রা শুরু হয় পত্র-পত্রিকার মধ্য দিয়ে। কিন্তু সাদাত হোসাইনের যাত্রা ঘটেছে ভিন্নভাবে। ঘটেছিলো সরাসরি বইয়ের ছাপা অহ্মরের মধ্যে দিয়ে। 
তার জীবনের মূল টার্নিং পয়েন্ট ছিলো ২০১৫ সাল। তার লেখা বড় যেই মূল উপন্যাস আরশিনগর। ওই উপন্যাসের মধ্য দিয়েই বড় পরিসরে আর সাধারণ ব্যক্তিবর্গের কাছে তার আত্মপ্রকাশ ঘটে। 

আরশিনগর গড়ে ওঠার পেছনের গল্প :

আরশিনগর সাদাত হোসাইনের কার্যদর্শনীয় স্বাধীন হয়ে ওঠা চরিত্রের গল্প, জীবনের গল্প। সে দেখেছিলো, বিচ্ছিনতাবাদী যেই কমিউনিস্ট আন্ডারগ্রাউন্ড পার্টি ছিলো...তারা তাদের মূল লক্ষ্যের জায়গা থেকে এসে অনেক ব্যক্তিকেন্দ্রিক ক্ষমতা দখলের জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে এবং তাদের কিছু ঘটনাপ্রবাহ তার সামনে ঘটে তার শৈশবে। সেই ঘটনাগুলোকেই কেন্দ্র করে উপন্যাসটি গড়ে উঠেছিলো। 
করোনা কালীন সময়ে তার বই তেমন বিক্রি হয়নি। কিন্তু তুলনা করলে দেখা যায় করোনাকালীন সময়ের আগে (২০১৮-২০১৯) সালে তার বইয়ের ২০ হাজার+ কপি সেল হয়েছিলো। 

সাদাত হোসাইন এর সাক্ষাতকার(মাছরাঙা টেলিভিশন : রাঙা সকালে অনুষ্ঠান) থেকে নেয়া কিছু কথা:

সাদাত হোসাইন বলেন- আমাদের দেশের জনসংখ্যার অনুপাতে বই সেলের সংখ্যা খুবই কম। আমার আরশিনগর উপন্যাসটি যখন পাঠক তুমুল ভাবে গ্রহণ করেন তখন আমার লেখার আগ্রহ খুব বেড়ে যায়। 
আমাদের শৈশব থেকে আমরা যখন বেড়ে উঠি তখন কিন্তু আমাদের বিভিন্ন ধরনের আগ্রহ তৈরি হয় তাইনা! যে আমি আঁকাআকি করতে  ভালোবাসি, আমি গান গাইতে ভালোবাসি ইত্যাদি। এখন ব্যাপারটা হচ্ছে আপনি যখন গান গাইতে ভালোবাসেন; আপনাকে বুঝতে হবে যে ভালোবাসাটাকে পরিনত করার জন্য যে সক্ষমতা টা দরকার সেটা আমার আছে কিনা? 
হ্যাঁ একটা ব্যাপার হচ্ছে প্রত্যাশা আর অন্যটি হচ্ছে হ্মমতা। তো এই দুটোকে যদি আপনি এক জায়গায় আনতে পারেন তখন আপনার পক্ষে সিদ্ধান্ত টা নেওয়া হয়তো সহজ হয়ে যাবে। ২০১৫ সালের প্রকাশিত উপন্যাসটি যখন তুমুলপ্রিয় হয় তখন আমার মনে হয় যেখানে আমার সক্ষমতা রয়েছে সেখানে আমার আগ্রহের জায়গাটিও রয়েছে। যেহেতু আমার আগ্রহ এবং সক্ষমতা একই বিন্দুতে রয়ে গেছে তো তখনই আমি ঝুঁকিটা নেই। তারপর দেখা গেলো, আমার লেখা বইগুলোর আগ্রহ পাঠকের কাছে দ্বিগুণ বেড়ে যায়। 
আমার কাছে মনে হয়, প্রযুক্তির কারণে হয়তো বই পড়ার উপরে প্রভাব পড়েছে। তবে; এটা অনেকটা ছুড়ির মতো, যেটা ডাক্তারের কাছে থাকলে মানুষের জীবন বাঁচানোর উছিলা হয়, আর ছিনতাইকারীর কাছে থাকলে হয়তো মানুষের জীবন নাশ করে। তো আপনি যদি প্রযুক্তিকে ব্যবহার করতে চান; বইয়ের ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রেও সেটি একটি দারুণ ভূমিকা পালন করতে পারে! তাই আমিও প্রযুক্তিকে ব্যবহার করার চেষ্টা করেছি আমার বইগুলোকে পাঠকের পাছে ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে। বাংলাভাষী যেই পাঠক বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে আছে, তাদের যদি ১% এর কাছেও আমার বই ছড়িয়ে দিতে পারি তাহলে একটা বৃহৎ সংখ্যা হবে।

সাদাত হোসাইন কখন লিখতে বসেন:

তিনি কখনো জোর করে বা মনের বিরুদ্ধে গিয়ে লিখতে বসেন না। তবে এটা ঠিক যে, অবচেতনভাবে কোনো একটা গল্প তার মাথায় গেঁথে থাকে আর এটি বার বার হয় তখনই তিনি লিখতে বসেন। তাকে লেখার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করায় উত্তরে বলেন, লিখতে বসার কোনো ধরাবাঁধা কোনো নিয়ম আসলে নাই। তবে বিশেষ করে গভীর রাতে লিখতে বসতে তিনি স্বাচ্ছন্দবোধ করেন। দিনের বেলায় হৈ হুল্লোড় পরিবেশে তিনি লিখতে পারেন না। তার ক্ষেত্রে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তিনি দেখেন যে, একটা গল্প হয়তো সামান্য কিছু একটা ভেবে লিখতে বসেছে এবং কিছুক্ষণ পর-ই গল্প ও গল্পের চরিত্রগুলোই তাকে নিয়ন্ত্রণ করছে। আর ওই গল্পগুলোই খুউব বেশি সুদর্শন হয় বলে তিনি মনে করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত সময়ে :

সাদাত হোসাইন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নৃবিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনা করেন। পারিবারিক বিপর্যয়ের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের য় বর্ষেই পরিবারের হাল ধরতে হয় তাকে। পার্ট টাইম চাকরি করে পরিবারের চাহিদা আর তার পড়াশোনাটাও চালিয়ে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কাজ করে এসে সে বিভ্রান্ত হয়ে যায়। তিনি দেখছে, তিনি নিজের জন্য বেঁচে নাই। তিনি আসলে পরিবারের জন্য বাঁচতেছে।
বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হওয়ার শুরুতে তিনি অস্বস্তিতে ভুগতেন। যে তিনি গ্রামের পরিবেশ থেকে আসা! ভিন্ন পরিবেশ, ভিন্ন প্রেক্ষাপট, ভিন্ন সমাজ ব্যবস্থা ইত্যাদি এমন অনেক ধরনের বিষয় নিয়ে সমস্যায় পড়তেন তিনি।
তখন ঢাকাতেও তার বেশ কিছু বন্ধু হয়ে ওঠে। যাদের সাথে চলাচল, মেলামেশা ছিল। বন্ধু হওয়ায় তাদের উদ্দেশ্য করে সাদাত হোসাইন তার কিছু লেখা তাদের দেখায়। লেখাগুলো দেখে তার দু'একজন বন্ধু খুব গাঁজন করে। যে বলে, এই গুলা কিছু হইছে, কোনো লেখা হইছে? এগুলো বলে তারা তাদের লেখাগুলো দেখায়। 

ওহ শুনুন, সাদাত হোসাইন কিন্তু খুব সংবেদনশীল ধরনের ব্যক্তি। যে কেউ তাকে অনুপ্রাণিত করলে খুব অনুপ্রাণিত হয়। আবার তার বিপরীত ঘটলে হতাশ হয়ে যায়। যখন তার বন্ধুদের নেতিবাচক কথা ভেবে হতাশ হলো তখন ভাবলো আসলেই হয়তো তার লেখা হয়না!
এরপর তিনি ৬-৭ বছর লেখেননি। তিনি ভুলেই গিয়েছিলেন তার ভিতর একজন লেখক সত্তা ছিলো। তিনি এখন উপলব্ধি করেন সেইটা তার ভুল সিদ্ধান্ত ছিলো। আবার ভাবেন যা কিছু ঘটে ভালোর জন্যই ঘটে। তিনি যে তারপর লেখালেখি করে এই অবস্থানে পৌছেছে ; আমরা ভালো করেই জানি তার অবস্থান এখন কোথায়। এখানে পৌছানোর পিছনে বিশেষ কাউকে পায়নি তিনি। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘Allah is Almighty’

নানান ধরনের পেশায় যুক্ত হওয়া :

প্রত্যেকটা মানুষের নিজের বাঁচার জন্য কিছু অনুসঙ্গ দরকার হয়। তখন সে নিজের জন্য বাঁচতে কি কাজটি করতে চায়; সেই কাজটি খুঁজতে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের কাজের সাথে জড়িত হয়। পত্রিকার কাজ করেন, টিভি তে কাজ করেন, NGO তে কাজ করেন ইত্যাদি... 
প্রত্যেকটা কাজ করতে গেলেই তার মনে হয়েছিলো, হ্যাঁ তিনি হয়তো এই কাজটি করতে চায় এবং সেই কাজটি করতে গিয়ে আরেকটি কাজ দেখে মনে হয়েছে না এটি উপভোগ করছিনা ওই কাজটি হয়তো উপভোগ করবো! 
তিনি নিজেকে খুঁজতে নিজের ভালোলাগার জায়গাটা বুঝতে অনেক বেশি চাকরি বেছে নিয়েছিলো। এইযে এতো এতো জায়গায় ঘুড়েছিলো এতো এতো জায়গা গুলোকে বোঝাপড়ার মধ্যে দিয়ে নিয়ে এসেছিলো, তার বোঝাপড়া নিয়ে স্পষ্ট হয়েছিলো। সর্বশেষ তার মনে হয়েছিলো ওই শক্তির জায়গাটা তার আছে; যে তিনি লিখে তার জীবন ধারন করতে পারবে। এই ব্যাপারে সাদাত হোসাইন বলেন- “আগে যেই বিষয়টি জরুরি সেটি হচ্ছে আগে নিজেকে বুঝতে পারা। যে আমার আসলে সেটি করারা সক্ষমতা আছে কিনা!? এই নিজেকে বুঝতে পারাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।  এটা যদি আমরা বুঝতে পারি তাহলে সৃজনশীল যেকোনো মাধ্যমেই আমাদের সাফল্য অর্জন করার সুযোগ আছে। বুঝতে পারার প্রক্রিয়াটা নিজেকেই উপলব্ধি করতে হবে। নিজেকে আবিষ্কার করতে হবে। সেটি পারলে জীবনে ব্যর্থ হওয়ার সুযোগ খুব সামান্যই থাকে।

সাদাত হোসাইনের ফটোগ্রাফি:

একটা সময় সাদাত হোসাইন ফটোগ্রাফি করতেন। তার কাছে সবসময় মনে হতো সে গল্প বলতে চায়; সেসময় তিনি ফটোগ্রাফির মাধ্যমে গল্প বলার চেষ্টা করতো। সেসময় তার ফটোগ্রাফি নিয়ে একটা বই বের হয়েছিলো।...
সেটা ছিলো সাদাত হোসাইনের মাস্টার্স র‍্যাগ ডেয় এর সময়। সবাই বিদায় নিবে। পিকচার তুলতেছিলো। গ্রুপের কেউই ফটোগ্রাফার হতে চাচ্ছিলো না। হলেই তো সে সেই গ্রুপ পিকচারে থাকতে পারবে না। ফ্রেম থেকে বাদ পড়ে যাবে। এই সময় ছবিটি তোলার জন্য সাদাত হোসাইন রাজি হয় এবং তুলে দেয়। ছবিটি তোলা হয়েছিলো জাহাঙ্গীর বিশ্ববিদ্যালয়ের ওইখানে বটতলা নামে একটা জায়গা আছে। তারপর একটু দূরে খেতে যাচ্ছিলো রিক্সা করে। তো রিক্সা ওয়লা যে প্যাডেল চাপতেছে ওইটাই দুষ্টামির ছলে ক্যামেরা দিয়ে ক্লিক করে। সেসময় তিনি নতুন ফেসবুক ব্যবহার করতো। ওই পিকচার টা তিনি ফেসবুকে আপলোড দিয়েছিলো। ক্যাপশন দিয়েছিলো- Tittle : Combot [Life vs Time] ক্যাপশনে এমনটা লিখে তিনি জীবন এবং সময়ের মধ্যে লড়াইয়ের ব্যাপারটা বুঝাতে চেয়েছিলেন। পিকচার টা অনেককে চমকিত করলো। 
এক বড় ভাই তাকে একটা লিংক দিলো। লিংক টা ছিলো Flickr website এর। সেসময় বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় ফটোগ্রাফি ওয়েবসাইট ছিলো flickr.com
ওই বড় ভাই লিংক দিয়ে সাদাত হোসাইনকে বললো, তুমি এখানে তোমার তোলা পিকচার সাবমিট করো। এখানে প্রতিযোগিতা চলছে সেরা পিকচারের। আর সাদাত হোসাইন সেখানে পিকচার সাবমিট করলেন। তার কিন্তু ফটোগ্রাফি সম্পর্কে তখন একটুও ধারণা ছিলো না। 
ছবিটি সেখানে সাবমিট করার পর একটা ব্যাখ্যা বা ভাষ্য লিখে দিলেন। পিকচার কনটেস্ট এর জার্জপ্যানেল সাদাত হোসাইনের ছবিটিকে সেরা ২০ এ নিয়ে আসলো। এরপর অনলাইন ভোটিং সিস্টেমে তার ছবিটি ১ম হয়ে যায়। 
যেখানে তার ছবি তোলা বা ফটোগ্রাফি সম্পর্কে কিঞ্চিৎ ধারণা ছিলোনা সেখানে তার তোলা প্রথম ছবিটিই জনপ্রিয় ফটোগ্রাফি ওয়েবসাইটে সেরা হয়ে যায়। একেবারে অপ্রত্যাশিত ব্যাপার ছিলো তার কাছে। সেখান থেকেই তার ফটোগ্রাফির সূচনা। 

সাদাত হোসাইনের চলমান চিত্র নির্মাণ:

লেখক সাদাত হোসাইন শুধু স্থির চিত্র নির্মাতাই নয়, তিনি অধিক গুনের অধিকারী। এক কথায় তিনি মাদারীপুরের এক লিজেন্ডমাদারীপুরের গর্ব। তিনি চলমান চিত্রও নির্মাণ করেন। তার তৈরীকৃত একেকটি নির্মাণ বেশ সাড়া জাগিয়ে তোলে তার ভক্তদের মাঝে। এমনকি এ থেকে তার নতুন ভক্তেরও বিপ্লব ঘটে। তার উল্লেখযোগ্য কিছু চলমান চিত্র যেমন :— বোধ, ফেরা, The Shoes, প্রভৃতি। 
বোধ তার অন্যতম একটি নির্মাণ। তার নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলে এই ভিডিওটিই প্রথম আপলোড দেয়া হয়। বোধ চলমান চিত্রটি নির্মানে নিয়ামুল নামের এক কাছের ছোট ভাই তাকে প্রথম ধারণা দিয়েছিলো। এরপর চলচ্চিত্রটি নির্মানে অর্থের জোগানটাও নিয়ামুল দেয়। তাছাড়া আরও অনেকের অবদান রয়েছে এই চিত্রটি নির্মানে। মুন্না নামের বাচ্চাটি ছিলো মূল অভিনয়ে। সাদাত হোসাইন যেখানে থাকতেন তার পাশের একটা বস্তিতে থাকতো মুন্না। তো একটা ব্যাপার ঘটেছিলো, সেটা হচ্ছে যেদিন শ্যুটিংয়ের কথা ছিলো সেদিন মুন্নাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিলো না। 
খুঁজতে খুঁজতে তাকে পাওয়া গেলো এক ইফতার পার্টির আয়োজিত স্থানে। মুন্না ওইখান থেকে আসতে চাইতেছিল না। বলাই হয়নি যে, বোধ চিত্রটি রমজান মাসে নির্মাণ করা হয়েছিলো।
সাদাত হোসাইন অনেক কিছু খাওয়ানোর কথা বললো কিন্তু মুন্না ওইখানে বসেই ইফতার করবে। সে আসবে না। এরপর রাজি করিয়ে স্যুট নেয়া হয়েছিলো। সাদাত হোসাইনের প্রত্যাশা অনুযায়ীই মুন্নার অভিনয় হয়েছিলো। 
আর মুন্নার বোন হিসেবে অভিনয়ে ছিলো সে মূলত মুন্নার বোন ছিলো না(অনেকে ভাবে সত্যিই ওইটা ওই বাচ্চাটার বোন)। ওই বাচ্চা মেয়েটির বাসাও মুন্নার বস্তিতে। মেয়েটার নাম ছিলো উর্মি। 
দুই শিশু বাচ্চাকে দিয়ে অভিনয় করাতে সাদাত হোসাইনের খুব হিমশিম খেতে হয়েছিলো। বোধ চলমান চিত্রটি নির্মাণ করতে প্রায় দুদিন সময় লেগেছিলো তাদের। 

সাদাত হোসাইনের লেখা বইয়ের তালিকা:

লেখক সাদাত হোসাইন এ পর্যন্ত ছোট বড় অনেক গুলো কবিতা, উপন্যাস, থ্রিলার সিরিজ, গল্প লিখেছেন। 

উপন্যাস 

  •  মানবজনমপ্রথম প্রকাশ—২০১৭
  • প্রিয়তম অসুখ সে, প্রথম প্রকাশ—২০২২
  •  আরশিনগর, প্রথম প্রকাশ—২০১৫
  •  মেঘেদের দিনপ্রথম প্রকাশ—২০১৯
  • নির্বাসন, প্রথম প্রকাশ—২০১৯
  • মরনোত্তমপ্রথম প্রকাশ—২০১৯
  • জানালার ওপাশে, প্রথম প্রকাশ—২০১৩
  • নিঃসঙ্গ নক্ষত্র, প্রথম প্রকাশ—২০১৮
  • অন্দরমহলপ্রথম প্রকাশ—২০২১
  • বিভা ও বিভ্রম, প্রথম প্রকাশ—২০২১
  • তোমার নামে সন্ধ্যা নামে,প্রথম প্রকাশ—২০২১
  • অর্ধবৃত্ত, প্রথম প্রকাশ—২০২০
  • স্মৃতিগন্ধাপ্রথম প্রকাশ—২০২১
  • ইতি স্মৃতিগন্ধাপ্রথম প্রকাশ—২০২২

কবিতা 

  • কাজল চোখের মেয়েপ্রথম প্রকাশ—২০১৮
  • যেতে চাইলে যেয়োপ্রথম প্রকাশ —২০১৮
  • আমি একদিন নিখোঁজ হবোপ্রথম প্রকাশ —২০২০
  • তোমাকে দেখার অসুখপ্রথম প্রকাশ —২০২০
  • কাজল চোখের মেয়েপ্রথম প্রকাশ —২০১৮
  • প্রণয়ে তুমি প্রর্থনা হওপ্রথম প্রকাশ —২০২১

কথাসাহিত্য 

  • আমার আর কোথাও যাওয়ার নেইপ্রথম প্রকাশ —২০১৪
  • তোমার নামে সন্ধ্যা নামেপ্রথম প্রকাশ —২০২১

থ্রিলার 

  • ছদ্মবেশ, প্রথম প্রকাশ—২০১৯
  • শেষ অধ্যায়, প্রথম প্রকাশ —২০১৯
  • সত্যটা মিথ্যা, প্রথম প্রকাশ —২০২২
  • সে এখানে নেইপ্রথম প্রকাশ —২০২২

শিশু গল্প

  • গল্পঘর, প্রথম প্রকাশ —২০২১

সাদাত হোসাইনের পুরষ্কার লাভ:

লেখক সাদাত হোসাইন বই লিখে অনেক পুরষ্কার জিতেছেন। তিনি ২০১৬ সালে শ্রেষ্ঠ পরিচালক; বাংলাদেশ শর্ট অ্যান্ড ডকুমেন্টারি ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল পুরষ্কার, SBSP-RP ফাউন্ডেশন সাহিত্য পুরষ্কার, চেম্বার ইন্টারন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড, ২০১৯ সালে হুমায়ুন আহমেদ সাহিত্য পুরষ্কার, একই বছরে শুভজন সাহিত্য পুরষ্কার, চোখ সাহিত্য পুরষ্কার, এবং ২০১৯ সালে মার্ভেল অফ টুমরো ইনফ্লুয়েন্সার্স অ্যাওয়ার্ডে সেরা লেখক ও ‘কালি ও কলম তরুণ কবি ও লেখক পুরষ্কার লাভ করেন।

সবশেষ, আমরা তো লেখক সাদাত হোসাইনের সেই শৈশব থেকে এ পর্যন্ত জীবনী জানার চেষ্টা করলাম। অনেক কিছু জানলাম। দেখলাম যে সাধারণ ঘরে জন্ম নিয়ে, সেখান থেকে ভালো কিছু আশা করা ছিলো অপ্রত্যাশিত ব্যাপার। সেই অপ্রত্যাশিত ব্যাপারকেই প্রত্যাশিত করে তুলেছেন লেখক সাদাত হোসাইন। তার এই জীবনী আমাদের যে কারোর জন্যই অনুপ্রেরণার। আর মাদারীপুরে বসবাসরত আমাদের জন্য গর্বের। দোয়া আর ভালোবাসা রইলো লেখক সাদাত হোসাইনের জন্য ; আল্লাহ তার জীবনে আরও উন্নতি দান করুক।

Post a Comment

0 Comments