Ticker

7/recent/ticker-posts

ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) | মাদারীপুর প্রেক্ষিতঃ

 

National Awami party
(NAP)

মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে ১৯৫৭ সালের জুলাই মাসে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি(ন্যাপ) গঠিত হয়। ১৯৫৭ সালের ৬-১০ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইলের কাগমারিতে আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী এবং হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মধ্যে প্রধানত পররাষ্ট্র নীতির বিষয়ে মতবিরোধ দেখা দেয়। ওই বছর ১৮ মার্চ মাওলানা ভাসানী পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেন এবং আওয়ামী লীগের বামপন্থি অংশের উদ্যোগে ঢাকার রূপমহল সিনেমা হলে ২০-২৫ জুলাই গণতান্ত্রিক কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ সম্মেলনে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) গঠিত হয়। ন্যাপের সভাপতি নির্বাচিত হন মাওলানা ভাসানী এবং সম্পাদক নির্বাচিত হন পশ্চিম পাকিস্তানের মাহমুদুল হক ওসমানী। 


১৯৬৭ সালের দিকে প্রধানত আইয়ুব সরকারের প্রতি নমনীয় সুবিধাবাদী মনোভাব, বিরোধী দলীয় ঐক্য ও ছয়দফা আন্দোলন পাশ কাটানো প্রশ্নে ন্যাপ নেতৃবৃন্দের মধ্যে মতবাদ দেখা দেয়। ১৯৬৭ সালের ৩০ নভেম্বর রংপুরে অনুষ্ঠিত কাউন্সিল অধিবেশনে ন্যাপ চীনপন্থি ও মস্কোপন্থি এই দুই শিবিরে বিভক্ত হয়ে পড়ে। চীনপন্থী ন্যাপের সভাপতি হন মাওলানা ভাসানী এবং মস্কোপন্থি ন্যাপের সভাপতি হন সীমান্ত প্রদেশের আবদুল ওয়ালী খান। পূর্ব পাকিস্তান ওয়ালী  ন্যাপের সভাপতি ছিলেন অধ্যাপক মোজাফফর আহম্মদ। 

আওয়ামী লীগ ভেঙ্গে মাওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে নতুন দল ন্যাপ গঠিত হলে মাদারীপুরেও তার ঢেউ এসে লাগে। ২৬২৭ জুলাই সমাজতন্ত্রী ও গণতন্ত্রী কর্মী সম্মেলনে যোগদানের জন্য মাদারীপুর থেকে কর্মী সংগ্রহের উদ্যোগ গ্রহন করেন ভাঙ্গার আবদুল হাই। তাকে সহযোগিতায় এগিয়ে আসেন সিরাজ সরদার। পুলিশের ফেরারী খাতায় নাম থাকায় আত্মগোপনে থেকে সহযোগিতা করেন শান্তি সেন, সন্তোষ ব্যানার্জি এবং মোখলেছুর রহমান। মিলন সিনেমা হলের উত্তরে মায়াবিড়ি ফ্যাক্টরির পাশে মসজিদের প্রবেশ পথে একটা ঘরে অফিস খোলা হয়। সিরাজ সরদার এবং আবদুল হাই সাহেব নাজিমউদ্দিন কলেজের ছাত্রছাত্রী ও অন্যান্য কর্মীদের নিয়ে সেখানে বসতেন। নাজিমউদ্দিন কলেজের তৎকালীন ভিপি আনিসুর রহমান ছাত্র ইউনিয়ন করতেন। তিনিও ছাত্রদের নিয়ে বিকেলবেলা সেখানে বসতেন। মাদারীপুরের প্রতিনিধি হিসেবে কর্মী সম্মেলনে যোগ দেওয়ার জন্য তিনিও ঢাকা গিয়েছিলেন। মাদারীপুর প্রতিনিধি দলের অন্যান্যদের মধ্যে ছিলেন আবদুল ওহাব মজনু, মৃনাল বারুরী, আবদুল খালেক উকিল, মু, মতিয়ার রহমান প্রমুখ।৪৮

মু, মতিয়ার রহমান তাঁর লেখা "মাদারীপুর জেলার ইতিকথা" গ্রন্থে এ সম্মেলনে যোগদানের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বলেন- 'আমি ঢাকা থেকে এসে এ অবস্থায় ফনিদাকে পীড়াপীড়ি করতে থাকলাম কর্মী সম্মেলনে যোগ দিতে। তিনি রাজীও হলেন। ২৩ জুলাই ঢাকার লঞ্চে যাদের উঠার কথা আমিনুল চৌধুরী (বলদা চৌধুরী নামে ডাকে) ছাড়া আর কাউকে পাওয়া গেলো না। ফনিদাকে নিয়ে ২৪ জুলাই সকালে সদরঘাটে পৌছলাম। ঘাটে নেমে দেখি ট্রাকে মাইক লাগিয়ে সম্মেলন বিরোধী প্রচারনা চলছে। সম্মেলন স্থান রূপমহল সিনেমা হল।.. সদরঘাটের এ রাস্তাটুকুর উভয় পাশ থেকে ইস্টক বৃষ্টি হচ্ছে। অবস্থা বেগতিক দেখে ফনিদা কেটে পড়লেন। ইটের আক্রমনের ফাঁকে ফাঁকে একে একে দৌড়ে রাস্তা পাড় হয়ে আমিনুল এবং আমি পৌঁছলাম রূপমহলের কলাপসিবল গেটে।.. অভ্যর্থনায় দাঁড়িয়ে দুজন। শুনলাম মাদারীপুরের কেউ এসে তখনো পৌঁছায়নি। মাদারীপুরের কর্মী শুনেই গেট ফাঁক করে ঢুকতে দিল।'৪৯

রিলেটেড আর্টিকেল: 

ন্যাপের নেতৃত্ব দেওয়ার মতো মাদারীপুরে সেসময় কোনো রাজনীতির দর্শনে প্রাজ্ঞ ও সংস্কৃতিবান নেতাকর্মী ছিল না। বিড়ি শ্রমিক ইউনিয়নের কতিপয় কর্মীই ন্যাপের অনুসারী ছিল। এ মহকুমায় ন্যাপ গঠিত হয়ে থাকলে তা ছিল কাগুজে কমিটি। সিরাজ সরদারকে কনভেনার করে একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠিত হয়। মাদারীপুর ন্যাপের অন্যতম নেতা ছিলেন এ.টি.এম নুরুল হক খান, পালং থানার আবদুর রব মুন্সী, ভাঙ্গার আবদুল হাই প্রমুখ।

তথ্যসূত্র : “মুক্তিযুদ্ধে মাদারীপুর”, লেখক—বেনজীর আহম্মদ টিপু, সার্বিক সাহিত্য প্রকাশনী, প্রথম প্রকাশ—আগস্ট ২০১৪, পৃষ্ঠা—(৮০, ৮১)

আরও পড়ুন: দিপু নাম্বার টু
                : উইকিপিডিয়া


Post a Comment

0 Comments