১৮৬২ সালে মুন্সেফ ভগবান চক্রবর্তীর উদ্যোগে মাদারীপুরে একটি মাইনর স্কুল বা মধ্য ইংরেজী স্কুল স্থাপিত হয়। ১৮৮২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রতিষ্ঠার ২০ বছর পর স্কুলটি ইন্ট্রাস স্কুলে পরিনত হয়। নাম হয়‘মাদারীপুর হাইস্কুল’। ক্ষীরেন্দ্র চন্দ্র সেন এই স্কুলের প্রথম হেডমাস্টার নিযুক্ত হন। বিখ্যাত ছোট গল্পকার ও প্রসিদ্ধ রবীন্দ্র সাহিত্য বিশারদ প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায় এককালে মাদারীপুর হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষকের পদ অলংকৃত করেছিলেন। পেশাগত জীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত সাবজজ রাসবিহারী বসু, ডেপুটি ম্যাজিষ্ট্রেট শশীকান্ত রায়, উকিল নিবারন চন্দ্র দাশ এবং রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ কুমুদিনী কান্ত বন্দোপাধ্যায় প্রমুখ এই স্কুলের কৃতি সন্তান ছিলেন। ১৮৮৬ সালে মাদারীপুরে একটি মাইনর মাদ্রাসা স্কুল প্রতিষ্ঠিত হলে এন্ট্রান্স স্কুলের সংখ্যা হ্রাস পায়। ইসলামিয়া মাইনর মাদ্রাসা স্কুলটি ঢাকার নবাব বাহাদুরের অর্থানুকূল্যে পরিচালিত হত।
১৯৪৮ সালে দেশ বিভাগের পর হিন্দুদের ব্যপক সংখ্যায় দেশ ত্যাগের ফলে মাদারীপুর হাই স্কুলের ছাত্র সংখ্যা কমে যায়। তখন স্কুল দু'টিকে একত্রিকরনের তাগিদ আসে। মাদারীপুর হাইস্কুল ও ইসলামিয়া হাইস্কুল ১৯৪৮ সালে গৃহীত একত্রিকরনের সিদ্ধান্তানুযায়ী ১৯৫০ সালে ‘মাদারীপুর ইউনাইটেড ইসলামিয়া হাইস্কুল’ সংক্ষেপে ‘ইউ. আই হাইস্কুল’ নামে আত্মপ্রকাশ করে। একই বছরে বিলুপ্ত ইসলামিয়া হাইস্কুলের পূর্বের জায়গায় প্রতিষ্ঠা করা হয় 'নাজিমউদ্দিন কলেজ' এবং এ দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র করে মাদারীপুরের ছাত্র রাজনীতির সূচনা হয়।
রিলেটেড আর্টিকেল:
মাদারীপুরে নীল বিদ্রোহ
স্বদেশী আন্দোলনে মাদারীপুর
মাদারীপুরের সন্ত্রাসবাদী বিপ্লবী আন্দোলনের নেতা এবং বালেশ্বর যুদ্ধের অমর সৈনিক চিত্তপ্রিয় রায়চৌধুরী, মনোরঞ্জন সেনগুপ্ত, নীরেন্দ্রনাথ দাসগুপ্ত প্রমুখ মাদারীপুর হাইস্কুলের ছাত্রাবস্থায় ব্রিটিশ বিরোধী সশস্ত্র গুপ্ত সংগঠনে যোগ দেন। পূর্নচন্দ্র দাস রাজৈরের খালিয়া হাইস্কুলের ছাত্র ছিলেন।
১৯৩০ সালে সাইমন কমিশন রিপোর্ট প্রত্যাখ্যান করে করমচাঁদ গান্ধী সারা ভারতে আইন অমান্য আন্দোলন শুরু করলে স্কুল কলেজের বিপুল সংখ্যক ছাত্র এই আন্দোলনে সম্পৃক্ত হয়ে ভারতীয় ছাত্র আন্দোলনকে বেগমান করে। এ সময়ের প্রতিবাদী ছাত্রনেতৃত্ব ঐক্যবদ্ধ হয়ে ১৯৩৬ সালে গঠন করে 'সর্বভারতীয় ছাত্র ফেডারেশন'। এ সংগঠনটি কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ উভয়ের সংগে সমসখ্যতা বজায় রেখে চলে। কিন্তু আনুগত্যের দিক থেকে সংগঠনটির নেতৃবৃন্দ একদিকে কংগ্রেস ও এর বিভিন্ন বামপন্থি দল যেমন কংগ্রেস সোস্যালিস্ট পার্টি ও ফরওয়ার্ড ব্লক এবং অন্যদিকে নিষিদ্ধ ঘোষিত কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়ার মধ্যে দ্বিধা বিভক্ত হয়ে পড়ে। ১৯৩৯ সালের নাগপুর সম্মেলনে সর্বভারতীয় ছাত্র ফেডারেশনে প্রথম জাতীয়তাবাদী ও কমিউনিস্টপন্থিদের মধ্যে খোলাখুলি ভাঙন ধরে। ১৯৪০ সালের নাগপুর সম্মেলনে এ ভাঙন চূড়ান্ত রূপ নেয়। ১৯৪৫ সালে জাতীততাবাদী গ্রুপ ‘অল ইন্ডিয়া স্টুডেন্ট কংগ্রেস’নামে স্বতন্ত্র সংগঠন গড়ে তোলে। এরপর থেকে ‘সর্বভারতীয় ছাত্র ফেডারেশন’ পুরোপুরিভাবে কমিউনিস্টদের স্টুডেন্ট ফ্রন্টে পরিণত হয়।
মাদারীপুর সদর থানাধীন এওজ গ্রামের খন্দকার আবদুল হামিদ ১৯৪২ সালে মাদারীপুর মহকুমার ছাত্র ফেডারেশনের সেক্রেটারি ছিলেন। কিন্তু সর্বভারতীয় ছাত্র ফেডারেশনের মাদারীপুর মহকুমা শাখা কমিটির অন্য সদস্যদের সম্পর্কে তেমন কিছু জানা যায় না। অন্তর্দলীয় দ্বন্দ্বে আবদুল হামিদ খন্দকারের অবস্থান সম্পর্কে কোনো স্পষ্ট তথ্য পাওয়া যায় না।
১৯৬২ থেকে ৭১ এর উত্তাল দিনগুলোতে বিভিন্ন পর্যায়ে নাজিমউদ্দিন কলেজ থেকে মাদারীপুর মহকুমার সংগ্রামী ছাত্র সমাজকে যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন তাদের মধ্যে তাজুল ইসলাম শিকদার, আমীর হোসেন, ফজলুল হক, আদম আলী, সাধন চন্দ্র ঘোষ, সরওয়ার হোসেন মোল্লা, মতিয়ার রহমান, শাজাহান খান, নগেন চন্দ্র পাল, হাবিবুর রহমান আজাদ, শান্তিরঞ্জন হালদার, মফিজুর রহমান বাদল, আবদুস সামাদ, সোবাহান বেপারী, আবদুল মোতালেব মিয়া, হারুন অর রশিদ মোল্লা, নীরু হাওলাদার, তাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, হাবিবুর রহমান সূর্য, মাহবুব সাঈদ, হাবিবুল হক খোকন, আয়েশা খান, সুফিয়া খান প্রমুখ অন্যতম।
তথ্যসূত্র : “মুক্তিযুদ্ধে মাদারীপুর”, লেখক—বেনজীর আহম্মদ টিপু, সার্বিক সাহিত্য প্রকাশনী, প্রথম প্রকাশ—আগস্ট ২০১৪, পৃষ্ঠা—(৮২, ৮৩)
2 Comments
মাদারীপুর কলেজে আমার পড়ার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু ভাগ্যক্রমে হয়নি। ইতিহাস পড়ে ভালো লাগলো, ধন্যবাদ।
ReplyDeleteস্বাগতম🌹
Delete•Do Not Share Any Link.
Thank You•